লাল মাটি ও সোনাঝুরি
“লাল মাটির দেশ”-
সত্যিই তাই চারিদিকে লাল মাটির শহর ও গ্রাম নিয়ে বীরভূম। আর তার মধ্যে বোলপুর ও
সেই সন্নিকটে শান্তিনিকেতনেও যেন লাল মাটির ছোঁয়া। সঙ্গে রইল কবিগুরুর একগুছ
স্মৃতি। শহর থেকে কিছুটা এগিয়েই একটি সুন্দর গ্রাম, নাম তার বনের পুকুর ডাঙা।
চারিদিকে সবুজে সবুজ আর মাঝ দিকে লাল মাটির পথ আর বাড়িগুলো তৈরি মাটি দিয়ে। বাড়ির
দেয়াল গুলো শোভা পেয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন মূর্তির কারুকার্য দিয়ে। ছোটবড় নানা
রকমের রং বেরঙের বাড়ি গুলোর মধ্যে থাকে সেখানকার সাঁওতাল উপজাতির লোকজন। গ্রামটির
ঠিক পাশেই আছে মস্ত শালবন আর সোনাঝুরি গাছের সারি, আর এই বসন্তের শেষে গ্রীেষ্ম
পাতা ঝরা সেই রাস্তা গুলো শোভা পায় নানান রঙ্ের পাতায়। তার পাশেই রয়েছে শনিবারের সোনাঝুরির
হাট। শনিবারের হলেও বর্তমানে তা প্রায় প্রতিদিনের একটি আনন্দদায়ক জায়গা। সারা
দেশের অনেক মানুষজন ভিড় জমায় এই হাটে। দুপুরের পর থেকে গোধূলি লগ্নে হাটের সমাপ্তি
হয়। সেখানকার লোকেদের তৈরি হাতের কাজ, শিল্প, খাবার সমস্ত মিলিয়ে একটা মেলায় পরিণত
হয় এই হাট। শান্তিনিকেতনে এসে সকলেই চায় এই দিনটি এই হাটে কাটাতে। আর তার সাথে তো
আছেই কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া এবং এরসঙ্গে এখানকার স্নানীয় লোকশিল্পীদের সাথে কোমর
দুলিয়ে নাচের মজা নেওয়া। সমস্ত ঘটনাটি ঘটে সেই দুপুরের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত
সময়ে। শনিবারে শহরের বাবুদের জন্যে পসরা সাজিয়ে তাদের উপার্জনের পথ হিসেবে এই হাটকেই
বেছে নিয়েছেন এখানকার স্নানীয়রা। সবমিলিয়ে একটা মজার সময় একসাথে সমস্ত কিছুকে
একসাথে পাবার এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে লোকে আসে কবিগুরুর মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আর
কিছু বাড়তি আনন্দের সাক্ষী নিয়ে যেতে।