Friday, March 24, 2017

                                 লাল মাটি ও সোনাঝুরি

“লাল মাটির দেশ”- সত্যিই তাই চারিদিকে লাল মাটির শহর ও গ্রাম নিয়ে বীরভূম। আর তার মধ্যে বোলপুর ও সেই সন্নিকটে শান্তিনিকেতনেও যেন লাল মাটির ছোঁয়া। সঙ্গে রইল কবিগুরুর একগুছ স্মৃতি। শহর থেকে কিছুটা এগিয়েই একটি সুন্দর গ্রাম, নাম তার বনের পুকুর ডাঙা। চারিদিকে সবুজে সবুজ আর মাঝ দিকে লাল মাটির পথ আর বাড়িগুলো তৈরি মাটি দিয়ে। বাড়ির দেয়াল গুলো শোভা পেয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন মূর্তির কারুকার্য দিয়ে। ছোটবড় নানা রকমের রং বেরঙের বাড়ি গুলোর মধ্যে থাকে সেখানকার সাঁওতাল উপজাতির লোকজন। গ্রামটির ঠিক পাশেই আছে মস্ত শালবন আর সোনাঝুরি গাছের সারি, আর এই বসন্তের শেষে গ্রীেষ্ম পাতা ঝরা সেই রাস্তা গুলো শোভা পায় নানান রঙ্ের পাতায়। তার পাশেই রয়েছে শনিবারের সোনাঝুরির হাট। শনিবারের হলেও বর্তমানে তা প্রায় প্রতিদিনের একটি আনন্দদায়ক জায়গা। সারা দেশের অনেক মানুষজন ভিড় জমায় এই হাটে। দুপুরের পর থেকে গোধূলি লগ্নে হাটের সমাপ্তি হয়। সেখানকার লোকেদের তৈরি হাতের কাজ, শিল্প, খাবার সমস্ত মিলিয়ে একটা মেলায় পরিণত হয় এই হাট। শান্তিনিকেতনে এসে সকলেই চায় এই দিনটি এই হাটে কাটাতে। আর তার সাথে তো আছেই কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া এবং এরসঙ্গে এখানকার স্নানীয় লোকশিল্পীদের সাথে কোমর দুলিয়ে নাচের মজা নেওয়া। সমস্ত ঘটনাটি ঘটে সেই দুপুরের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত সময়ে। শনিবারে শহরের বাবুদের জন্যে পসরা সাজিয়ে তাদের উপার্জনের পথ হিসেবে এই হাটকেই বেছে নিয়েছেন এখানকার স্নানীয়রা। সবমিলিয়ে একটা মজার সময় একসাথে সমস্ত কিছুকে একসাথে পাবার এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে লোকে আসে কবিগুরুর মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আর কিছু বাড়তি আনন্দের সাক্ষী নিয়ে যেতে।

Sunday, March 19, 2017

                                                    দুর্গমতার মাঝে আনন্দ 


“এই পথ যদি না শেষ হয়………… যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলত”। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ আমার একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটা রাজ্যই আমার দেখা। তবে তার মধ্যে সিকিমটা যেন একটু অন্যরকম। চারিদিকে পাহাড় আর শীতের একটা অনুভূতি, আবার কিছুটা এগোতেই যেন চারিদিক বরফে ঢাকা।  সিকিম একটি সাজানো গোছানো শহর যার চারিদিকে রয়েছে সুন্দর পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য আর শহরটা যেন মেঘের উপর ভাসছে । যাবার পথেই প্রথম অনুভূতি মেঘের সাথে খেলা। খুব একটা পরিষ্কার জায়গা সিকিম আর চারিদিক যেন ছবির মতো আঁকা। ছিলাম শহরের মাঝখানেই, আর তার পাশেই ছিল মহাত্মা গান্ধী মার্গ- যেখানে সন্ধ্যে হলেই শুরু হয় বিভিন্ন ভাষাভাষীর লোকেদের আগমন। সময় ছিল সীমিত তাই আর দেরি না করে পরেরদিন বেরিয়ে পড়লাম শহরের আশেপাশের সুন্দর জায়গায় ঘুরতে আর সাথে নিয়ে আমার ক্যামেরা টা। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের বুক চিরে এগিয়ে চলেছি আর দেখছি সুন্দর সব জায়গা। এ যেন দিন ফুরলেও মন ভরে না। সারাদিন ঘুরে আর কনকনে ঠাণ্ডার চাদর চাপিয়েই চলল এদিক ওদিক ঘোরা। পরেরদিনের উদ্দেশ্য উত্তর সিকিমের কিছু জায়গা। সকালে যতই সেদিকে এগিয়ে চলছি ততই যেন মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা বাড়ছে। সেখানকার পথ গুলো কিছুটা দুর্গম কিন্তু আনন্দদায়ক আর চারিদিকে সাদা বরফে ঢাকা। স্থানিয়রা কাজ করছে বরফ সরিয়ে রাস্তা তৈরি করতে আর আমরা এগিয়ে চলেছি সেই পথ ধরে। মাঝে একটু বিরতি-জায়গার নাম ছাঙ্গু বাজার। স্থানিয়দের তৈরি খাবার খেয়ে আবার বেরলাম সামনের দিকে পরবর্তী উদ্দেশ্য ছাঙ্গু লেক আর ভারত-চীনের আন্তর্জাতিক সিমানা। লেক্ টা পুরোই বরফে ঢাকা আর পাশেই দাড়িয়ে  চমরীগাইদের নিয়ে তাদের মালিক, কিছু টাকা উপার্জনের জন্য। দিনের আকাশটা ছিল খুবই ভালো তাই মজাও ছিল দ্বিগুণ। দিনের শেষে ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় পেলাম বৃষ্টির, তবে কিছুটা ভয় আর মজা নিয়েই এগচ্ছি সামনের দিকে হঠাৎ শুরু হল বরফ পড়া যা ছিল আমাদের সকলের আশার বাইরে। যাইহোক সেই সময় সবাই গাড়ি থেকে নেমে মজা নিলাম তার। পথে ফেরার সময় মনে পরছিল সেই সব কাটিয়ে আসা মজা আর আন েন্দর কথা যা ভোলার নয়। পাহাড়ের উপর থেকে ছাঙ্গুর ছবিটা যেন অসাধারন। ২/৩ দিন সেরকম কাটিয়ে ফিরে এলাম বাড়ির পথে। তবে সেই শেষ মুহূর্তের মজাটা যেন আর কয়েকবার যাবার আগ্রহটাকে আর বাড়িয়ে দিল। 

Monday, March 13, 2017

                                                    “ এক টুকরো বসন্ত ”


“বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিল নেশা......বসন্ত এসে গেছে ”। শান্তিনিকেতনের বসন্তে যেন প্রকৃতির ছোঁয়া। এখাঙ্কার নিয়ম প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহারে দোল উৎযাপন। আর মনে পরে কবিগুরুর রেখে যাওয়া এইসব উপহার যা আমাদের জন্য এক অমূল্য পাওনা। চারিদিক যেন লকে লোকারন্ন। আকাশটা যেন লাল- নিল-হলুদ রঙে কেউ রাঙিয়ে দিয়েছে। এই আনন্দ সবাই যেন ভাগ করে নিতে সমস্ত বাঁধা ছেড়ে এসেছে এই লাল মাটির দেশে আর সবাই যেন মেতেছে রঙের খেলায়। সেখানে ছিল না কোন জাতি-ধর্মের ভেদ, ছিলনা কোন ভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে হিংসা, চারিদিকে যেন বেজে উথছে-“ ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল...” দিয়ে প্রভাত ফেরীর যাত্রা। সারাদিনের মনমুগ্ধ করা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর চারিদিকে রঙের খেলা-সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত আশ্চর্য চিত্র যা কোনোদিন না ভোলার মতো। ২০১৭-র এই বসন্ত আমার এখানকার ছাত্র জীবনের আমার শেষ বসন্ত। তাই কোন মুহূর্ত বাদ না দিয়ে সারাদিনটা কাটালাম সব বন্ধুদের সাথে। মজা- হুল্লোড়-আবির খেলা নাচ-গান সবই মনে পরবে বছর ঘুরতেই, সকালের অসমাপ্ত ঘুম ছেড়ে সেই বৈতালিক আর তারপর সারাদিনের খুশির আমেজ এই সমস্ত ব্যাপারটাকে পাবোনা কাছে। তবে যা পেয়েছি, যা নিয়ে যাব তার পুরোটাই যেন অমূল্য সম্পদ আর যাকে কাজে লাগিয়ে খুলবে ভবিষ্যতের দ্বার। সবসময়ই যেন একটা খুশি মনের মধ্যে দোলা দেবে আমিও কোনদিন এর আনন্দ উপভোগ করেছিলাম  আর তার সাক্ষী ছিলাম এইসব উজ্জল মুহূর্তের।


  

Thursday, March 9, 2017


                                                 ইতিহাসের একাল সেকাল 


সময় জিনিসটা সকলের জন্যই খুব মূল্যবান ।
ঐতিহাসিক তাজমহল
আমাদের কাজ শুধু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আর তার সাথে সমান তালে নিজেকে সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে বেড়ে ওঠা। নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করার দৌড়ে ছুটছে সবাই। শান্তিনিকেতনের বসন্তের আগমনের অপেক্ষায় সকলেই। বসন্তের সেই মুহূর্ত যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। সেই অপেক্ষাকে সাথে নিয়ে চললাম রাজধানী দিল্লিতে, আরও কিছু জ্ঞান আর সুন্দর কিছু অনুভূতি উপলব্ধি করতে। মাঝের সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে এগোলাম সেই দিকে। পথে যেতে যেতে দুলকি চালে এগিয়ে যাওয়া বিভিন্ন রাজ্যের উপর দিয়ে আর দেখা কিছু অজানা-অচেনা জায়গার সুন্দর ছবি। দিন ৪/৫ এর এই শিক্ষা লাভের ভ্রমণ একদিকে যেন ঠাকুমার ঝুলির ভেতরে জ্ঞানের ভাণ্ডার। সম্পূর্ণ এক নতুন অনুভূতি তার মধ্যে রয়েছে নতুন কাজ, অভিজ্ঞতা, নতুন মুখ-আর পরিচয় তার সাথে তো আছেই অনেক মজা। যাতায়াতের পথের সঙ্গী রাজধানীর কিছু স্মৃতি-বহনকারী জায়গা। এ যেন এক স্বর্গপ্রাপ্তির উদাহরণ স্বরূপ। কাজের ফাঁকে ছুটে চলেছিলাম কখনও ইন্ডিয়া গেট আবার কখনও বিশালাকার জামা মসজিদ, বিশালাকার সেই লাল কেল্লা, চাঁদনি চকের সেই বাজার, কখনও আবার নতুন দিল্লী থেকে পুরনো দিল্লী পথে আরও কিছু সুন্দর দৃশ্য। ছোটবেলায় ইতিহাসের পাতায় দেখা আর বাস্তবে চিত্র প্রায় এক পরিবর্তন শুধুই সময়ের। উদাহরণ স্বরূপ বলাই যায় এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা। এক দিকে নিজের জন্য সেই জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে কিছুটা জ্ঞান সংগ্রহ করে আনা আর তার সাথে ইতিহাসের সেই ছবি আর এক ধাপ কাছে থেকে দেখা। এত বড়ো প্রাপ্তির পর আবারও ফিরে আসা শান্তিনিকেতনে আর সেই সঙ্গে অপেক্ষা বসন্তের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেওয়ার।